বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী ও পাবনা এবং দক্ষিণবঙ্গের বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর ও ফরিদপুর জেলার অধিক্ষেত্র নিয়ে সুষ্ঠু বন ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট্রাল ফরেস্ট ডিভিশন নামে একটি বন বিভাগ চালু করা হয়, যার সদর দপ্তর দিনাজপুর সদরে স্থাপিত হয়। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণবঙ্গের বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর এবং ফরিদপুর জেলা পৃথক হয়ে যায়। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী ও পাবনা জেলার অধিক্ষেত্র নিয়ে নর্দার্ন ফরেস্ট ডিভিশন গঠিত হয়। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুর বন বিভাগ হতে রংপুর বন বিভাগ এবং রাজশাহী বন বিভাগ আলাদা হয়ে যায়। বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা তথা বর্তমান দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার অধিক্ষেত্র নিয়ে দিনাজপুর বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুর বন বিভাগের নাম পরিবর্তন করে সামাজিক বন বিভাগ, দিনাজপুর নামকরণ করা হয়। সামাজিক বন বিভাগ, দিনাজপুর গঠিত হওয়ার পর থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বন ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সড়ক, রেলওয়ে, খাল/বাঁধ, প্রান্তিক ভূমি এবং জবরদখলকৃত বনভূমিতে স্থানীয় জনগণের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সামাজিক বন বিভাগ, দিনাজপুর গঠনের পর থেকে স্থানীয় জনগণের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ২০০১-২০০২ আর্থিক সাল থেকে ২০১৯-২০২০ আর্থিক সাল পর্যন্ত সর্বমোট ৪,৯৯০.৫৬ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান, ৪,৩৩১.০৬ হেক্টর উডলট বাগান, ৫৪৫.০ হেক্টর কৃষিবন বাগান ও ৪৩০.৫৯ কিলো/হেক্টর অন্যান্য বাগান সৃজন করা হয় এবং এসব বাগানে ২,৭৬০ জন পুরুষ এবং ৩,৭৬৫ জন নারীকে উপকারভোগী সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তাছাড়া, ২০০১-২০০২ আর্থিক সাল থেকে ২০১৯-২০২০ আর্থিক সাল পর্যন্ত সামাজিক বনায়নের গাছ কর্তন করে ১,৯৬৪.১২ কিলোমিটার স্ট্রিপ/খাল/বাঁধ বাগান এবং ২,৬৭৩.২৬ হেক্টর উডলট বাগান পুনঃসৃজন করা হয়। ২০০১-২০০২ আর্থিক সাল থেকে ২০১৯-২০২০ আর্থিক সাল পর্যন্ত বিক্রিত বাগানের লভ্যাংশ হিসেবে ১৯,৪২২ জন উপকারভোগীর মাঝে ৪৭,১৩,৩৩,৩৯০/- টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং ২০০১-২০০২ আর্থিক সাল থেকে ২০২০-২০২১ (জুলাই/২০-জানুয়ারি/২১) আর্থিক সাল পর্যন্ত ৪৫,২৯,৫৫,৯৫৭/- টাকা রাজস্ব হিসাবে আদায় করা হয়েছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে সামাজিক বন বিভাগ, দিনাজপুরের অধিক্ষেত্রাধীন ২৩ টি উপজেলায় ২০,৩২৫ টি করে সর্বমোট ৪,৬৭,৪৭৫ টি চারা জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া, বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এ বন বিভাগে বিভিন্ন ধরনের বাগান সৃজন করা হয়েছে এবং উপকারভোগী হিসাবে লভ্যাংশ পেয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থারও উন্নতি সাধিত হয়েছে।
১। ফরেস্ট্রি সেক্টর প্রকল্প (১৯৯৭-৯৮ হতে ২০০৫-০৬):
প্রকল্পের আওতায় ২,৫৯৮.৭৪ হেক্টর উডলট বাগান, ৫৬১.০ হেক্টর কৃষিবন বাগান এবং ৩,২৫০.০ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান সৃজন করা হয়েছে এবং সেই সাথে উক্ত বাগানের সাথে ২৪,৭৭২ জন উপকারভোগীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
২। অনুন্নয়ন খাতের আওতায় বনায়ন কার্যক্রম (২০০৬-০৭ হতে ২০১৮-১৯):
অনুন্নয়ন খাতের আওতায় ১৬৬.৭৫ হেক্টর উডলট বাগান এবং ৭০.০ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান সৃজন করা হয়েছে এবং সেই সাথে উক্ত বাগানের সাথে ৪৬৩ জন উপকারভোগীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
৩। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প (২০১০-১১ হতে ২০১২-১৩):
প্রকল্পের আওতায় ২০.০ কিলোমিটার রেলওয়ে বাগান, ৫৬৪.০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক বাগান, ১৯১.০ কিলোমিটার সওজ বাগান, ১০০.০ কিলোমিটার বাঁধ বাগান সৃজন করা হয়েছে। এবং ৫০,০০০ টি প্রতিষ্ঠানে বনায়ন করা হয়েছে।
৪। ইকো-রিস্টোরেশন অব দি নর্দান রিজিয়ন অব বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্প:
প্রকল্পের মাধ্যমে ৬১৮.০ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান সৃজন করা হয়েছে এবং ৩৩ টি ছোটবড় পুকুর/জলাশয় পুনঃখনন করা হয়েছে।
৫। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প:
প্রকল্পের মাধ্যমে ৫.০০ হেক্টর ফল, পশু খাদ্য ও মিশ্র বাগান; ২,৫০০ টি চারা রোপণের মাধ্যমে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বাগান; ৫,০০০ টি চারা রোপণের মাধ্যমে শোভাবর্ধনকারী বাগান; ৫.০০ হেক্টর ঔষধি প্রজাতির বাগান এবং ৩০০ টি চারা রোপণের মাধ্যমে গোলাপ বাগান সৃজন করা হয়েছে।
৬। সুফল প্রকল্প (০১ জুলাই ২০১৮ হতে ৩০ জুন ২০২৩):
অবক্ষয়িত শালবনের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ হতে ২০২০-২১ আর্থিক সাল পর্যন্ত ৪৫০.০০ হেক্টর এনরিচমেন্ট বাগান, ৩০০.০০ হেক্টর স্ট্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট বাগান, ১৯০.০০ হেক্টর মিক্সড ফাস্ট গ্রোয়িং বাগান, ৩০০.০০ সিডলিং কি.মি. স্ট্রিপ বাগান, ৩০.০ হেক্টর ফডার বাগান, ৩২০.০০ হেক্টর শাল কপিচ ব্যবস্থাপনাধীন বাগান, ১০.০০ হেক্টর বিরল বিপদাপন্ন প্রজাতির বাগান, ১০.০০ হেক্টর এনটিএফপি, ২০.০ হেক্টর ঔষধি বাগান সৃজন করা হয়েছে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS